মধুসূদন । পোকায় ।বেত্রাঘাত
আজ্ঞে , মিছিমিছি মার খেয়ে মরছি — শুধু সিরাজউদ্দৌলা কেন , সমস্ত ইতিহাসখানাই পোকায় কেটেছে! এই দেখুন ।
মধুসূদন । ( চমকিয়া) আজ্ঞে , মাথা নয় , ওটা পিঠ ।
অভিভাবক । ষষ্ঠী-তৎপুরুষ কাকে বলে ?
মধুসূদন । জানি নে ।
কালাচাঁদবাবুর বেত্র-দর্শায়ন
মধুসূদন । ওটা বিলক্ষণ জানি — ওটা যষ্টি-তৎপুরুষ ।
অভিভাবকের হাস্য এবং কালাচাঁদবাবুর তদ্বিপরীত ভাব
অভিভাবক । অঙ্কশিক্ষা হয়েছে ?
মধুসূদন । হয়েছে ।
অভিভাবক । আচ্ছা , তোমাকে সাড়ে ছ'টা সন্দেশ দিয়ে বলে দেওয়া হয়েছে যে ,
পাঁচ মিনিট সন্দেশ খেয়ে যতটা সন্দেশ বাকি থাকবে তোমার ছোটো ভাইকে দিতে হবে ।
একটা সন্দেশ খেতে তোমার দু-মিনিট লাগে , কটা সন্দেশ তুমি তোমার ভাইকে দেবে
?
মধুসূদন । একটাও নয় ।
কালাচাঁদ । কেমন করে !
মধুসূদন । সবগুলো খেয়ে ফেলব । দিতে পারব না ।
অভিভাবক । আচ্ছা , একটা বটগাছ যদি প্রত্যহ সিকি ইঞ্চি করে উঁচু হয় তবে
যে বট এ বৈশাখ মাসের পয়লা দশ ইঞ্চি ছিল ফিরে বৈশাখ মাসের পয়লা সে কতটা উঁচু
হবে ?
মধুসূদন । যদি সে গাছ বেঁকে যায় তা হলে ঠিক বলতে পারি নে , যদি বরাবর
সিধে ওঠে তা হলে মেপে দেখলেই ঠাহর হবে, আর যদি ইতিমধ্যে শুকিয়ে যায় তা হলে
তো কথাই নেই ।
কালাচাঁদ । মার না খেলে তোমার বুদ্ধি খোলে না! লক্ষ্মীছাড়া , মেরে তোমার পিঠ লাল করব , তবে তুমি সিধে হবে।
মধুসূদন । আজ্ঞে , মারের চোটে খুব সিধে জিনিসও বেঁকে যায় ।
অভিভাবক । কালাচাঁদবাবু , ওটা আপনার ভ্রম । মারপিট করে খুব অল্প কাজই হয়
। কথা আছে গাধাকে পিটোলে ঘোড়া হয় না , কিন্তু অনেক সময়ে ঘোড়াকে পিটোলে
গাধা হয়ে যায় । অধিকাংশ ছেলে শিখতে পারে , কিন্তু অধিকাংশ মাস্টার শেখাতে
পারে না । কিন্তু মার খেয়ে মরে ছেলেটাই । আপনি আপনার বেত নিয়ে প্রস্থান
করুন , দিনকতক মধুসূদনের পিঠ জুড়োক , তার পরে আমিই ওকে পড়াব ।
মধুসূদন । ( স্বগত) আঃ , বাঁচা গেল ।
কালাচাঁদ । বাঁচা গেল মশায়! এ ছেলেকে পড়ানো মজুরের কর্ম , কেবলমাত্র
ম্যানুয়েল লেবার । ত্রিশ দিন একটা ছেলেকে কুপিয়ে আমি পাঁচটি মাত্র টাকা পাই
, সেই মেহনতে মাটি কোপাতে পারলে দিনে দশটা টাকাও হয় ।