ছাত্রের পরীক্ষা
ছাত্র শ্রীমধুসূদন। শ্রীযুক্ত কালাচাঁদ মাস্টার পড়াইতেছেন
অভিভাবকের প্রবেশ
অভিভাবক । মধুসূদন পড়াশুনো কেমন করছে কালাচাঁদবাবু ?
কালাচাঁদ । আজ্ঞে , মধুসূদন অত্যন্ত দুষ্ট বটে , কিন্তু পড়াশুনোয় খুব মজবুত । কখনো একবার বৈ দুবার বলে দিতে হয় না। যেটি আমি একবার পড়িয়ে দিয়েছি সেটি কখনো ভোলে না ।
অভিভাবক । বটে! তা , আমি আজ একবার পরীক্ষা করে দেখব।
কালাচাঁদ । তা , দেখুন-না ।
মধুসূদন । ( স্বগত) কাল মাস্টারমশায় এমন মার মেরেছেন যে আজও পিঠ চচ্চড় করছে । আজ এর শোধ তুলব । ওঁকে আমি তাড়াব ।
অভিভাবক । কেমন রে মোধো , পুরোনো পড়া সব মনে আছে তো ?
মধুসূদন । মাস্টারমশায় যা বলে দিয়েছেন তা সব মনে আছে ।
অভিভাবক । আচ্ছা , উদ্ভিদ্ কাকে বলে বল্ দেখি ।
মধুসূদন । যা মাটি ফুঁড়ে ওঠে ।
অভিভাবক । একটা উদাহরণ দে ।
মধুসূদন । কেঁচো!
কালাচাঁদ । ( চোখ রাঙাইয়া ) অ্যাঁ! কী বললি!
অভিভাবক । রসুন মশায় , এখন কিছু বলবেন না ।
কালাচাঁদ । আজ্ঞে , মধুসূদন অত্যন্ত দুষ্ট বটে , কিন্তু পড়াশুনোয় খুব মজবুত । কখনো একবার বৈ দুবার বলে দিতে হয় না। যেটি আমি একবার পড়িয়ে দিয়েছি সেটি কখনো ভোলে না ।
অভিভাবক । বটে! তা , আমি আজ একবার পরীক্ষা করে দেখব।
কালাচাঁদ । তা , দেখুন-না ।
মধুসূদন । ( স্বগত) কাল মাস্টারমশায় এমন মার মেরেছেন যে আজও পিঠ চচ্চড় করছে । আজ এর শোধ তুলব । ওঁকে আমি তাড়াব ।
অভিভাবক । কেমন রে মোধো , পুরোনো পড়া সব মনে আছে তো ?
মধুসূদন । মাস্টারমশায় যা বলে দিয়েছেন তা সব মনে আছে ।
অভিভাবক । আচ্ছা , উদ্ভিদ্ কাকে বলে বল্ দেখি ।
মধুসূদন । যা মাটি ফুঁড়ে ওঠে ।
অভিভাবক । একটা উদাহরণ দে ।
মধুসূদন । কেঁচো!
কালাচাঁদ । ( চোখ রাঙাইয়া ) অ্যাঁ! কী বললি!
অভিভাবক । রসুন মশায় , এখন কিছু বলবেন না ।
মধুসূদনের প্রতি
তুমি তো পদ্যপাঠ পড়েছ ; আচ্ছা , কাননে কী ফোটে বলো দেখি ?
মধুসূদন । কাঁটা ।
কালাচাঁদের বেত্র-আস্ফালন কী মশায় , মারেন কেন ? আমি কি মিথ্যে কথা বলছি ?
অভিভাবক । আচ্ছা , সিরাজউদ্দৌলাকে কে কেটেছে ? ইতিহাসে কী বলে ?
মধুসূদন । পোকায় ।বেত্রাঘাত আজ্ঞে , মিছিমিছি মার খেয়ে মরছি — শুধু সিরাজউদ্দৌলা কেন , সমস্ত ইতিহাসখানাই পোকায় কেটেছে! এই দেখুন ।
প্রদর্শন । কালাচাঁদ মাস্টারের মাথা-চুলকায়ন অভিভাবক । ব্যাকরণ মনে আছে ?
মধুসূদন । কাঁটা ।
কালাচাঁদের বেত্র-আস্ফালন কী মশায় , মারেন কেন ? আমি কি মিথ্যে কথা বলছি ?
অভিভাবক । আচ্ছা , সিরাজউদ্দৌলাকে কে কেটেছে ? ইতিহাসে কী বলে ?
মধুসূদন । পোকায় ।বেত্রাঘাত আজ্ঞে , মিছিমিছি মার খেয়ে মরছি — শুধু সিরাজউদ্দৌলা কেন , সমস্ত ইতিহাসখানাই পোকায় কেটেছে! এই দেখুন ।
প্রদর্শন । কালাচাঁদ মাস্টারের মাথা-চুলকায়ন অভিভাবক । ব্যাকরণ মনে আছে ?
মধুসূদন । আছে ।
অভিভাবক । ‘ কর্তা ' কী , তার একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও দেখি ।
মধুসূদন । আজ্ঞে , কর্তা ও পাড়ার জয়মুন্শি ।
অভিভাবক । কেন বলো দেখি ।
মধুসূদন । তিনি ক্রিয়া-কর্ম নিয়ে থাকেন ।
কালাচাঁদ । ( সরোষে) তোমার মাথা!
অভিভাবক । ‘ কর্তা ' কী , তার একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও দেখি ।
মধুসূদন । আজ্ঞে , কর্তা ও পাড়ার জয়মুন্শি ।
অভিভাবক । কেন বলো দেখি ।
মধুসূদন । তিনি ক্রিয়া-কর্ম নিয়ে থাকেন ।
কালাচাঁদ । ( সরোষে) তোমার মাথা!
পৃষ্ঠে বেত্র
মধুসূদন । ( চমকিয়া) আজ্ঞে , মাথা নয় , ওটা পিঠ ।
অভিভাবক । ষষ্ঠী-তৎপুরুষ কাকে বলে ?
মধুসূদন । জানি নে ।
কালাচাঁদবাবুর বেত্র-দর্শায়ন মধুসূদন । ওটা বিলক্ষণ জানি — ওটা যষ্টি-তৎপুরুষ ।
মধুসূদন । হয়েছে ।
অভিভাবক । আচ্ছা , তোমাকে সাড়ে ছ'টা সন্দেশ দিয়ে বলে দেওয়া হয়েছে যে , পাঁচ মিনিট সন্দেশ খেয়ে যতটা সন্দেশ বাকি থাকবে তোমার ছোটো ভাইকে দিতে হবে । একটা সন্দেশ খেতে তোমার দু-মিনিট লাগে , কটা সন্দেশ তুমি তোমার ভাইকে দেবে ?
মধুসূদন । একটাও নয় ।
কালাচাঁদ । কেমন করে !
মধুসূদন । সবগুলো খেয়ে ফেলব । দিতে পারব না ।
অভিভাবক । আচ্ছা , একটা বটগাছ যদি প্রত্যহ সিকি ইঞ্চি করে উঁচু হয় তবে যে বট এ বৈশাখ মাসের পয়লা দশ ইঞ্চি ছিল ফিরে বৈশাখ মাসের পয়লা সে কতটা উঁচু হবে ?
মধুসূদন । যদি সে গাছ বেঁকে যায় তা হলে ঠিক বলতে পারি নে , যদি বরাবর সিধে ওঠে তা হলে মেপে দেখলেই ঠাহর হবে, আর যদি ইতিমধ্যে শুকিয়ে যায় তা হলে তো কথাই নেই ।
কালাচাঁদ । মার না খেলে তোমার বুদ্ধি খোলে না! লক্ষ্মীছাড়া , মেরে তোমার পিঠ লাল করব , তবে তুমি সিধে হবে।
মধুসূদন । আজ্ঞে , মারের চোটে খুব সিধে জিনিসও বেঁকে যায় ।
অভিভাবক । কালাচাঁদবাবু , ওটা আপনার ভ্রম । মারপিট করে খুব অল্প কাজই হয় । কথা আছে গাধাকে পিটোলে ঘোড়া হয় না , কিন্তু অনেক সময়ে ঘোড়াকে পিটোলে গাধা হয়ে যায় । অধিকাংশ ছেলে শিখতে পারে , কিন্তু অধিকাংশ মাস্টার শেখাতে পারে না । কিন্তু মার খেয়ে মরে ছেলেটাই । আপনি আপনার বেত নিয়ে প্রস্থান করুন , দিনকতক মধুসূদনের পিঠ জুড়োক , তার পরে আমিই ওকে পড়াব ।
অভিভাবক । ষষ্ঠী-তৎপুরুষ কাকে বলে ?
মধুসূদন । জানি নে ।
কালাচাঁদবাবুর বেত্র-দর্শায়ন মধুসূদন । ওটা বিলক্ষণ জানি — ওটা যষ্টি-তৎপুরুষ ।
অভিভাবকের হাস্য এবং কালাচাঁদবাবুর তদ্বিপরীত ভাব
অভিভাবক । অঙ্কশিক্ষা হয়েছে ? মধুসূদন । হয়েছে ।
অভিভাবক । আচ্ছা , তোমাকে সাড়ে ছ'টা সন্দেশ দিয়ে বলে দেওয়া হয়েছে যে , পাঁচ মিনিট সন্দেশ খেয়ে যতটা সন্দেশ বাকি থাকবে তোমার ছোটো ভাইকে দিতে হবে । একটা সন্দেশ খেতে তোমার দু-মিনিট লাগে , কটা সন্দেশ তুমি তোমার ভাইকে দেবে ?
মধুসূদন । একটাও নয় ।
কালাচাঁদ । কেমন করে !
মধুসূদন । সবগুলো খেয়ে ফেলব । দিতে পারব না ।
অভিভাবক । আচ্ছা , একটা বটগাছ যদি প্রত্যহ সিকি ইঞ্চি করে উঁচু হয় তবে যে বট এ বৈশাখ মাসের পয়লা দশ ইঞ্চি ছিল ফিরে বৈশাখ মাসের পয়লা সে কতটা উঁচু হবে ?
মধুসূদন । যদি সে গাছ বেঁকে যায় তা হলে ঠিক বলতে পারি নে , যদি বরাবর সিধে ওঠে তা হলে মেপে দেখলেই ঠাহর হবে, আর যদি ইতিমধ্যে শুকিয়ে যায় তা হলে তো কথাই নেই ।
কালাচাঁদ । মার না খেলে তোমার বুদ্ধি খোলে না! লক্ষ্মীছাড়া , মেরে তোমার পিঠ লাল করব , তবে তুমি সিধে হবে।
মধুসূদন । আজ্ঞে , মারের চোটে খুব সিধে জিনিসও বেঁকে যায় ।
অভিভাবক । কালাচাঁদবাবু , ওটা আপনার ভ্রম । মারপিট করে খুব অল্প কাজই হয় । কথা আছে গাধাকে পিটোলে ঘোড়া হয় না , কিন্তু অনেক সময়ে ঘোড়াকে পিটোলে গাধা হয়ে যায় । অধিকাংশ ছেলে শিখতে পারে , কিন্তু অধিকাংশ মাস্টার শেখাতে পারে না । কিন্তু মার খেয়ে মরে ছেলেটাই । আপনি আপনার বেত নিয়ে প্রস্থান করুন , দিনকতক মধুসূদনের পিঠ জুড়োক , তার পরে আমিই ওকে পড়াব ।
মধুসূদন । ( স্বগত) আঃ , বাঁচা গেল ।
কালাচাঁদ । বাঁচা গেল মশায়! এ ছেলেকে পড়ানো মজুরের কর্ম , কেবলমাত্র ম্যানুয়েল লেবার । ত্রিশ দিন একটা ছেলেকে কুপিয়ে আমি পাঁচটি মাত্র টাকা পাই , সেই মেহনতে মাটি কোপাতে পারলে দিনে দশটা টাকাও হয় ।
কালাচাঁদ । বাঁচা গেল মশায়! এ ছেলেকে পড়ানো মজুরের কর্ম , কেবলমাত্র ম্যানুয়েল লেবার । ত্রিশ দিন একটা ছেলেকে কুপিয়ে আমি পাঁচটি মাত্র টাকা পাই , সেই মেহনতে মাটি কোপাতে পারলে দিনে দশটা টাকাও হয় ।
Post a Comment Blogger Facebook